0.00৳
কাঁথার প্রচলন দুই বাংলা জুড়েই আছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনাসহ সারা বাংলার গ্রামে গঞ্জেই ছিটিয়ে আছে কাঁথা বানানোর সংস্কৃতি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহারেও দেখা যায় বৈচিত্রপূর্ণ কাঁথার সমাহার। বিহারের ‘সুজনী’ কাঁথার আছে আন্তর্জাতিক মহলে ‘ভৌগলিক স্বীকৃতি’। যদিও একই নামে এবং প্রায় একই ধরনের কাঁথা বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলেও প্রচলিত আছে।
খানিকটা ছিড়ে যাওয়া, পুরাতন হয়ে যাওয়া শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি কিংবা চাদরকেই সাধারণত কাঁথা বানানোতে কাজে লাগানো হয়, তবে কাঁথা বানাতে শাড়ির আছে আলাদা কদর। প্রথমে পুরাতন কাপড়কে ধুয়ে, এতে মাড় (ভাত রান্নার সময় অবশিষ্ট তরল) দেওয়া হয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। পুরুত্বের দিক থেকে ক্ষেত্রবিশেষে একটি কাঁথায় তিনটি থেকে সাতটি শাড়িও ব্যবহার করা হয়।
নকশী কাঁথা ছাড়াও গ্রামে গঞ্জে সাধারণ সেলাই করা কাঁথা দেখা যায়। সেখানে নকশার বাহাদুরী নেই, প্রয়োজনটাই মুখ্য সেখানে। সেলাইয়ের পর সেলাই করে সেখানে পুরাতন কাপড়গুলোকে একত্র করে কাঁথা বানানো হয়। কাঁথার চারদিক ঘিরে মজবুত সেলাই দেওয়া হয় যাতে সহজে ছিড়ে না যায়। শীত নিবারণের জন্য সেলাই করা কাঁথা বেশ পুরো আর মোটা হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী এবং চাপাই নবাবগঞ্জ এলাকায় তৈরিকৃত কাঁথা বেশ মোটা হয়। শীত নিবারণের জন্য আমাদের দেশীয় লেপ কিংবা কম্বলের পাশাপাশি কাঁথার আলাদা সমাদর আছে।
Instock
বাংলায় দীর্ঘসময় ধরে চলে বর্ষাকাল। মাঠ ঘাট থৈ থৈ বর্ষায় ঘরের বাইরের কাজ কমে আসে নারীদের, একটুখানি অবসরের সন্ধান পায় তারা। বাঙালী নারীদের এই অবসর সময়ে পান আর সুপারির আড্ডায় সুঁই সুতো হাতে কাঁথা সেলাই এক চিরাচরিত অভ্যাস। গ্রামীণ সমাজে দ্রুত পরিবর্তন আসার সাথে সাথে এ ধরনের সামাজিকতায়ও পরিবর্তন আসছে।
তবে এখনো গল্পে গল্পে গ্রামীণ নারীরা দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নকশী কাঁথার কাজ করে যান। অনুপম দক্ষতায় কাঁথার জমিনে ফুটে উঠে গাছ, পাখি কিংবা লতাপাতার ছবি। কোনোসময় কাঁথায় উঠে এসেছে দুঃখ আর সুখের কাহিনী, কখনো লন্ঠনের নিভু আলোয় শোনা পুঁথির গল্পই সূচ দিয়ে কাঁথায় ফুটিয়ে তুলেছেন নারীরা।
কাঁটাতারে বাংলা এফোঁড় ওফোঁড় হলেও দুই বাংলাতেই কাঁথা সেলাইয়ের ধরন আর নকশাও মিল পাওয়া যায়, কারণ বাংলা ভাগ হওয়ার অনেক আগেই এই শিল্পের জন্ম। তাই বাংলার প্রবাদে, গল্প, গানে কিংবা কবিতায় অমর হয়ে আছে নকশী কাঁথা। ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা’র মতো বাগধারা যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে পল্লীকবি জসীম উদদীনের আখ্যানকাব্য ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। এই আখ্যানকাব্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে উঠে এসেছে কীভাবে কাঁথায় সূচের প্রতিটি পরতে পরতে ফুটে উঠতে পারে ভালোবাসা আর বেদনার কাহিনী। প্রেমিক রুপাই আর প্রেমিকা সাজুর ভালোবাসার অমর আখ্যান এই কাব্য।
©2024 dhama.com.bd All Rights Reserved. This platform is made possible by the support of the Sustainable Enterprise Project (SEP)
Reviews
There are no reviews yet.